ঈদুল আজহা ২০২৫–এ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলোর ভিড়ে একটি ব্যতিক্রমী আলোচনার জন্ম দিয়েছে ‘উৎসব’। রাজনৈতিক থ্রিলার কিংবা অ্যাকশন ঘরানার সিনেমাগুলোর মধ্যে পারিবারিক গল্পে তৈরি এই সিনেমাটি অনেক দর্শকের কাছে যেন এক ধরনের সময়ভ্রমণ। চার্লস ডিকেন্সের বিখ্যাত উপন্যাস A Christmas Carol অবলম্বনে নির্মিত এই সিনেমার গল্পের পটভূমি লন্ডনের পরিবর্তে স্থানান্তরিত হয়েছে ঢাকার মোহাম্মদপুরে, যা এক নতুন আবহ তৈরি করেছে।
সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন তানিম নূর। তিনি গল্পটিকে এমনভাবে দেশীয় প্রেক্ষাপটে রূপান্তর করেছেন, যা দর্শকদের কাছে একদম নিজস্ব মনে হয়েছে। ৯০ দশকের পারিবারিক জীবনের আবেগ, দ্বন্দ্ব, ভুল, ক্ষমা এবং সম্পর্কের টানাপড়েন ফুটে উঠেছে অত্যন্ত সাবলীলভাবে। ফলে ‘উৎসব’ সিনেমাটি শুধু একটি বিনোদনমূলক চলচ্চিত্র নয়, বরং এটি এক ধরনের নস্টালজিক অভিজ্ঞতা হিসেবেও কাজ করেছে।
এই সিনেমাটির একটি বড় শক্তি ছিল এর অভিনয়শিল্পী নির্বাচন। তারিক আনাম খান, জাহিদ হাসান, আফসানা মিমি, জয়া আহসান, অপি করিম, চঞ্চল চৌধুরী, আজাদ আবুল কালাম, ইন্তেখাব দিনার, সুনেরাহ্ বিনতে কামাল, সৌম্য জ্যোতি এবং সাদিয়া আয়মান—সকলেই নিজ নিজ চরিত্রে ছিলেন সাবলীল এবং বিশ্বাসযোগ্য। এত সংখ্যক গুণী শিল্পীর একসঙ্গে পারফর্ম করা দৃশ্যগুলো দর্শকের মনে গভীর ছাপ ফেলেছে।
‘উৎসব’ সিনেমাটি আইএমডিবিতে ঈদের মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেটিং পেয়েছে—৮.৮। দর্শক ভোটের পরিমাণ তুলনামূলক কম হলেও, যারা দেখেছেন তারা অধিকাংশই উচ্চ রেটিং দিয়েছেন। এতে বোঝা যায়, যারা সিনেমাটি দেখেছেন, তারা খুবই সন্তুষ্ট হয়েছেন গল্প ও উপস্থাপনায়।
সিনেমার চিত্রনাট্য এবং সংলাপ ছিল বাস্তবঘন, আবেগনির্ভর ও কখনো কখনো দার্শনিক। দৃশ্যায়ন ও সিনেমাটোগ্রাফিতে ছিল আলোছায়ার গভীর ব্যবহার, যা সিনেমার আবহকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। এই দিকগুলোই ‘উৎসব’কে ঈদের অন্যান্য সিনেমা থেকে ভিন্ন অবস্থানে এনে দিয়েছে।
মুক্তির শুরুর দিকে ‘উৎসব’ খুব বেশি সংখ্যক হলে জায়গা পায়নি। তবে দর্শকের আগ্রহ ও রিভিউ দেখে হলসংখ্যা বাড়ানো হয়। ফলে এটি বক্স অফিসে ধীরে ধীরে জায়গা করে নিচ্ছে। প্রচার খুব জোরালো না হলেও মুখে-মুখে প্রচার এবং সোশ্যাল মিডিয়ার ইতিবাচক আলোচনা সিনেমাটির গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়েছে।
‘উৎসব’ কোনো উচ্চকিত বিনোদন নয়—বরং এটি নীরব আবেগের এক উৎসব। সিনেমাটি যারা দেখেছেন, তাদের অভিজ্ঞতা ছিল এক ধরনের অন্তর্মুখী ভ্রমণ, যেখানে পরিবার, সম্পর্ক, ভুল এবং ক্ষমার গুরুত্ব নতুনভাবে অনুভব করা যায়। এটি নিঃসন্দেহে বাংলা সিনেমায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।